1130Views 0Comments
একইসাথে হাফেজ, বুয়েট থেকে ইলেকট্রিকাল পড়ে ডাটা সাইন্টিস্ট, আর এমবিবিএস পড়ে রীতিমতো সাড়া জাগানো জুবায়ের হোসাইনের গল্প শুনবো Short Stories এর আজকের এপিসোডে।
জুবায়ের হোসাইন। স্কুল টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর পড়াশোনা করেছেন নটরডেমে, এইচএসসি পাস করেন ২০১৩ সালে।
এরপর বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ২৭৩ তম স্থান অর্জন করেন। শুধু বুয়েট না, সেসময়ই তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজেও চান্স পেয়েছিলেন এবং ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু সবশেষে ইন্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে ক্লাস শুরু করেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে।
বুয়েটে থাকাকালীন সময়েই তিনি ইলেকট্রিকাল পড়াশোনার পাশাপাশি কোডিং কম্পিটিশন থেকে শুরু করে ডাটা সাইন্সের সবকিছু এক্সপ্লোর করেন। আর ইন্জিনিয়ারিংয়ের শেষদিকে বিভিন্ন AI এন্ড ডেটা সাইন্স বেইজড কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ ও চাকুরি শুরু করেন। যার প্রায় সবগুলোই ছিল বিদেশি কোম্পানিতে রিমোট বেইজড।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে জুবায়ের হোসেন ভর্তি হন ইলেকট্রিকালের মাস্টার্সেই। আর সমসাময়িক সময়ে চাকুরির জন্য বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিংয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে তার মেডিকেল সেক্টরে আগ্রহ জন্মায়, এমনটাই Short Stories কে জানান তিনি। এছাড়াও তার পরিবারের একজন ক্যান্সারে মারা যাওয়ার জন্য তার প্রিসিশন মেডিসিনে পড়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠে।
এরই ফলশ্রুতিতে বুয়েটের চেপ্টার শেষে তিনি আবারও ও-লেভেল (এসএসসি সমমান) এবং এ-লেভেল (এইচএসসি সমমান) এক্সামে বসেন ২০২০ সালে। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশেই কোনো মেডিকেল ইন্সটিটিউশনে পড়াশোনা করতে। এরজন্য যথেষ্ঠ চেষ্টা করেও বিভিন্ন জটিলতার জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
পাড়ি জমান কিরগিজ স্টেট মেডিকেল একাডেমিতে। যেখানে তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। একইসাথে নামকরা আমেরিকান কোম্পানিত Grokstream এ ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছে। এর পূর্বেও সিনিয়র মেশিন লার্নিং ইন্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন Bista Solution Inc তে।
ইন্জিনিয়ারিং আর ডাক্তারি নিয়ে জানা হলো। কিন্তু কোরআনের হাফেজ হওয়ার পেছনের গল্পটা কি ছিলো?
তিনি Short Stories কে জানান, তার ছোটবেলার শুরুটা হয়েছিল একটা কম্বাইন্ড স্কুলে। যেখানে হিফজ আর ইংলিশ মিডিয়াম একইসাথে পড়ানো হয়। সেখানেই তিনি আল-কোরআন হিফজ করেন।
এরপর আর যতকিছুই করেন না কেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে সবসময়ই রমজানে তারাবি নামাজ পড়িয়েছেন, যা তার হিফজকে প্রতি বছর আবার নতুন করে ঝালিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। তিনি ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে ৩-৪ বছর তারাবী পড়িয়েছেন। এমনকি কিরগিজস্থানে গিয়েও তিনি মসজিদে তারাবী নামাজ পড়ান। ব্যাপারটা রীতিমতো গর্বের!
এই মানুটা একের পর এক স্বপ্নজয় করে চলেছেন। স্বপ্ন দেখেন দেশে ফিরে এসে শিক্ষকতা করবেন, নিজস্ব রিসার্চ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করবেন।
প্রথাগত সব নিয়ম-কানুন ভেঙে স্রোতের বিপরীতে জুবায়ের হোসেনের বাংলাদেশে যেই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলেন, সেটা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য। তার জন্য, তার স্বপ্নগুলোর জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইলো। আর পরিশেষে, যেই গল্পটা শুধু হাতে গোনা কয়েকটা মানুষ জানতো, সেই গল্পটা Short Stories Team এর সাথে শেয়ার করার জন্য কৃতজ্ঞতা।