82Views 0Comments
“রাহাত ইয়াসির: এআই জগতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র”
আজকের গল্পের নায়ক রাহাত ইয়াসির। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই থেকে গ্রাজুয়েশন করে বর্তমানে কর্মরত আছেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন (IATA) এ হেড অব এনালিটিক্স হিসেবে। দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ১০-১২ এরও বেশি সময় নিয়ে কাজ করছেন ডেটা এনালিটিক্স এবং এআই নিয়ে। বর্তমানে অবস্থান করছেন কানাডার মন্ট্রিয়ালে। শুরুতেই বলে নিচ্ছি আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ) বিশ্বের এয়ারলাইনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থা। এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত ২৪০টি এয়ারলাইন বিশ্বের ৮৪% বিমাণ যাত্রী পরিবহন করে। আইএটিএ বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম সহায়তা এবং নীতিমালা ও মান প্রণয়নে কাজ করে থাকে।
ছোটবেলা থেকে কম্পিউটারে ভীষণ আগ্রহ তার। যতই বয়স বাড়তে থাকে বয়জ্যেষ্ঠদের থেকে পেতে থাকেন বিভিন্ন উপদেশ যেমন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা এরোনিটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার। রাহাত বলেন, “ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে আর দশটা বাংলাদেশি ছাত্রের মতো আমিও কনফিউসড ছিলাম কি করবো জীবনে”।
আর দশজনের মতো তিনিও ভুগেছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন এমন কিছু পড়বেন যেটায় তার আগ্রহ আছে, যেটা তিনি এনজয় করবেন। ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার এবং প্রোগ্রামিং এ আগ্রহ থাকার কারণে ভর্তি হয়ে যান বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথ এর কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুরু হয় ভিন্ন এক যাত্রা।
তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ডেটা এনালাইসিস নিয়ে কাজ করেননি তিনি। এআই এবং ডেটা এনালাইসিস নিয়ে কাজ করতে তার মনে প্রভাব ফেলে প্রথম বর্ষে থাকাকালীন “মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ”। কিছু AIUB এর শিক্ষার্থী সেসময় ইমাজিন কাপের ফাইনালে গিয়ে পিপলস চয়েজ এওয়ার্ড জিতে নেয়। এটি রাহাতের মনে অনেক দাগ কাটে। সেখান থেকেই শুরু।
রাহাত বলেন “আমার জীবনে প্রথম বিল্ড করা এপ্লিকেশন হচ্ছে ‘Project Beetle’, এটি ছিলো একটি কৃষি বিষয়ক এপ্লিকেশন। তখন থেকেই আমার জীবনে শুরু হয় এআই এবং ডেটা এনালিটিক্স এর সখ্যতা।” সেসময় মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ রাউন্ডে রানার আপ হন তারা। এছাড়াও সেই প্রজেক্টে তারা আরও বেশ কিছুদিন কাজ করেন, বিভিন্ন এওয়ার্ড পান। এর সুবাদে সুইডেন যাওয়া হয় বিশ্বের সেরা দশ ডেভেলপার এর একজন হিসেবে। পাবলিশ করেন রিসার্চ পেপার।
নর্থসাউথ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষে চাকরিজীবনের শুরু। সেসময়ই তার পাবলিশ করা পেপার চোখে পড়ে এক প্রফেসরের। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু ‘ইউনিভার্সিটি অব সাস্কাচুয়ান’ এ মাস্টার্সের। চলে যান কানাডায়। আন্ডারগ্র্যাডে অধ্যয়নরত ছাত্রদের প্রতি রয়েছে তার একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপদেশ, “আমি মনে করি আন্ডারগ্রাজুয়েশন এর পড়ার সময়ই ছাত্রদের উচিত এমন কোনো একটি টপিক নিয়ে কাজ করা যেটায় সে প্যাশন ফিল করে এবং ভবিষ্যতে ভালো কিছু দেখতে পায়।”
IATA তে আসার আগে এআই নিয়ে তিনি কাজ করেছেন বিশ্বের বেশ কিছু নামী কোম্পানিতে। রাহাত বলেন, “হঠাৎ করে জীবনে আসলে কিছু হয়না। সেটা আসলে গল্প কিংবা উপন্যাসেই সম্ভব। একটা জায়গায় যেতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়”। রাহাতের গল্পে উঠে আসে এআই তে ক্যারিয়ার বিল্ড করতে কিভাবে এগোতে হবে। ঠিক কি প্রসেস একজনের ফলো করা উচিত। রাহাত মনে করেন বাংলাদেশের এআই এর ভবিষ্যত বেশ ভালো। বাংলাদেশে যারা আছেন তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে, অনেক ডেটা সংগ্রহ করার সম্ভাবনা এবং সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু এআই কাজ তুলনামূলক কম হয়েছে তাই এটা একটা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে আরও বেশি কাজ করার জন্য। রাহাতের ভাষ্যে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল কিন্তু একদিনেই কিংবা এক বছরেই তৈরি হয়নি। আবার শুধু ডেটা কালেক্ট করলেই ব্যবহার বান্ধব টুল তৈরি করা সম্ভব না। এর পিছনে অনেক মানুষের বহু বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম যুক্ত থাকে।
বর্তমান বিশ্বের একটি বড় ভয় হচ্ছে এআই মানুষকে রিপ্লেস করে সব কাজ করবে। রাহাতের মতে, “বিশ্বে মানুষের সংখ্যা সীমিত কিন্তু কাজ অফুরন্ত, এআই কিংবা রোবোটিক্স হচ্ছে তার একটি সমাধান এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই”।
যারা সিএসই নিয়ে পড়ছেন তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে রাহাত মনে করেন সিএসই অনেক বড় একটি ফিল্ড। যারা কোডিং শিখছে কিংবা কোডিং এ ভালো করছে তারাই যে শুধুমাত্র ভালো করবে এমন না। সিএসই তে আরও অনেক ফিল্ড রয়েছে যেমন নেটওয়ার্কিং, ডেটাবেইস, ক্লাউড, ব্লকচেইন । এসব রোলেও ক্যারিয়ার তৈরি করা সম্ভব। নিজের প্যাশন ফলো করেই ক্যারিয়ারে ফোকাস করা উচিত।
রাহাত কানাডায় ডেভেলপারদের “থার্টি আন্ডার থার্টি” লিস্টে জায়গা করে নিয়েছেন। এত কম বয়সে এত সফলতার রহস্য সম্পর্কে তিনি নিজেই আলোকপাত করেছেন। তার মতে এখানে রহস্যের আসলে কিছু নেই। কন্টিস্টেন্সি, হার্ডওয়ার্ক, লেগে থাকাই হচ্ছে মূলমন্ত্র। তিনি বলেন, “কোনো কিছু পাওয়ার পরে সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, পরের জিনিস নিয়ে চিন্তা করা উচিত। সবসময় মাথা নত করে বিনয়ী থাকা উচিত।”
রাহাত গত নয় বছর ধরে মাইক্রোসফট এর এআই এর এমভিপি এওয়ার্ড পেয়েছেন। যেখানে কানাডায় মাত্র দুজন এমভিপি রয়েছেন এবং পুরো বিশ্বের একশো জনের একজন তিনি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জন্য এটি একটি অনেক বড় একটি গর্বের জায়গা।
বর্তমানে রাহাত ‘ইউনিভার্সিটি অব সাস্কাচুয়ান’ এ কম্পিউটার সাইন্সে নিজেই একটি স্কলারশিপ স্পন্সর করছেন। যেখানে প্রতিবছর একজন শিক্ষার্থীকে তিনি অর্থনৈতিক সাহায্য করেন যাতে করে সে তার পড়াশোনা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে এটি একটি অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। তিনি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এই উদ্যোগ নিতে চান।
এই রাহাত ইয়াসিররাই নতুন প্রজন্মের গর্ব। বিশ্ব পরিমন্ডলে এক টুকরো বাংলাদেশকে বয়ে বেড়ান। আমাদেরকেও সু্যোগ করে দেন এই গ্লোবাল ভিলেজে কিছু নিয়ে অহংকার করার। তার এই গল্প অনুপ্রানিত হয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি স্তর থেকে উঠে আসুক হাজারো রাহাত ইয়াসির।